মনের মতো

শোভনের আজ বড় শান্তির দিন। মেয়ে বেশ কয়েক বছরের জন্য চলে গেল তার স্বপ্ন স্বার্থক করতে। সঙ্গে বাবার ইচ্ছেটাও পূরণ করে দিয়ে গেল।

মেয়ের জন্য গর্ব-উদ্বেগের সঙ্গে সঙ্গে আজ মুক্তির আনন্দে বিহ্বল শোভন। আর অলকার মুখ দেখতে হবে না। বাঁকা বাঁকা কথাও শুনতে হবে না। অকারন ঝামেলা গুলোও আর হবে না। ওঃ শান্তি।

২৩টা বছর ধরে জ্বালিয়েছে বউটা। এত চাহিদা সামলাতে গিয়ে হিমসিম খেয়েছে শোভন প্রতি পদে।

জন্মদিনে কেক চাই। বিবাহবার্ষিকীতে ফুল চাই। বৃষ্টিতে একসাথে ভিজতে চাই। পুজোর ভিড়ে ঘুড়ে বেড়াতে চাই…… শুধু চাই চাই আর চাই। না পেলেই গোসা। যত্ত সব আজে বাজে কথা। শোভনও অবশ্য ছাড়নেওয়ালা নয়। সে ও ট্যাকোশ   ট্যাকোশ    কথা শুনিয়ে দিত। ব্যাস রোজ ঝামেলা লেগেই থাকতো।

হাজার বার অলকাকে শোভন বলেছে ছেড়ে চলে যেতে। সে মেয়ে যায়ই না। বলে, “কেন যাব?”

শেষ মেশ বিরক্ত হয়ে অবশ্য গেছিল শোভনকে ছেড়ে। কিন্তু যন্ত্রনা দিয়েই গেল। মেয়েটাকে ট্যাঁকে করে নিয়ে গেল। বাপের মন কাঁদে মেয়েটার জন্য। ব্যাস মাঝে মাঝেই ছুটল শোভন মেয়ের জন্য। অসহ্য, বিরক্তিকর লাগত। তবুও মেয়েটাকে কাছে পাওয়াটা বড় ব্যাপার।

কিন্তু বউয়ের থেকে মুক্তি নেই। কথা শোনানোর বিরাম ছিলনা। এক সময় বউ আমার পাশে ছিল বলে আমি তাকে সর্বক্ষন সম্মান দেব? যত্তসব আজগুবি কল্পনা।

ব্যাবসায় যখন মন্দা চলছিল, অলকা তখন সংসারের হাল ধরেছিল ঠিকই। ঘর-বার সামলেছিল একা হাতে। অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই বলে বউয়ের এত অভিযোগ করার কী আছে? এখন অবস্থা বদলেছে। শোভন এখন স্বচ্ছল। অলকাকে প্রয়োজন নেই তার। লোক লাগিয়ে সব কাজ করিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে সে।

কেন শুনবে শোভন অলকার কথা? কেন থাকবে অলকার মত করে? কেন বাঁচবে অলকার পছন্দে? নিজের পছন্দ ছাড়া কোনও দিন কোনও পোশাক পরেনি শোভন। অলকার পছন্দের জামা সে কোন দুঃখে পরবে? অলকাকে তো কোনোদিন ও বলেনি ওর পছন্দের জামাকাপড় পরতে।

বলবেই বা কেন? ও যে ব্যাক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।

অলকার বক্তব্য ছিল, “স্বামি-স্ত্রী একে অন্যের পছন্দ-ইচ্ছেকে সম্মান করবে, সেটাই নাকি স্বাভাবিক।“ যত্তসব ব্যাকডেটেড চিন্তা ভাবনা। নিজের ইচ্ছের বিসর্জন কিছুতেই দেবে না শোভন। 

হানিমুনে গেছিল বউয়ের পছন্দের জায়গায়। আর নয়। তারপর থেকে শোভনের পছন্দের বেড়ানোর জায়গা ছাড়া আর কোথাও ঘুরতে যায়নি ওরা। কেন যাবে? বেড়ানো মানে তো এনজয় করা। অপছন্দের জায়গা হলে কি উপভোগ করা যায়? অলকারও নিশ্চই শোভনের পছন্দের জায়গা ভালই লাগত। নাহলে দাঁত বের করে ছবি তুলত কেন?

অলকার পছন্দ গুলো বড্ড সেকেলে। গ্রাম দেখতে চাইত। নদীর ধারে বসে থাকতে চাইত। বাংলা আর তার আশপাশের ইতিহাস আর সৌন্দর্য ঘাটতে চাইত…… একে সময় নষ্ট ছাড়া আর কী বলা যায়?

কোনও কিছুই কোনও দিন মেলেনি শোভন-অলকার। খাওয়া, পরা, থাকা সব কিছুতেই ছিল মতবিরোধ। অলকা চেষ্টা করত শোভনের মতো করে নিজেকে গড়ে নিতে। কিন্তু হয়নি। শোভনের ওর ব্যাবহারটাই অসহ্য লাগত। কথাবার্তা ছিল জঘন্য।  পরিবারের অন্যদের সঙ্গে হেসে কথা বললেও শোভনের সঙ্গে অলকা বড্ড খারাপ ব্যাবহার করত। অলকার ব্যাখ্যা ছিল, “নিজের লোকের সঙ্গে আবার ফর্মালিটির কি আছে? ফ্রাস্ট্রেশন তো কাছের মানুষের কাছেই দেখানো যায়।“

শোভনের এসব ন্যাকামো অসহ্য লাগত। নিজেকে ডাস্টবিন বানানোয় আপত্তি ছিল তার। আর তাই অলকা চাইলেও কোনোদিন বউয়ের প্রশংসা করতে পারেনি সে। ওই তো রূপের ছিরি। তার আবার প্রশংসা!

 

সম্পর্কটা টিকে ছিল মেয়ের জন্যই। মেয়ে স্বপ্ন উড়ানে উঠতেই, শোভন যেন মুক্তির স্বাদ পেল।

চুলোয় যাক অলকা।

এবার সাবস্টিটিউট খুঁজতে হবে।

মনের মত।

কিন্তু, সেটা ঠিক কেমন?              

 

                                             নবনীতা

                                                                     


Comments

Popular posts from this blog

বসন্তের কাছে আবদার.......